আতঙ্কে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীরা

ডেস্ক রিপোর্ট ◑ আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের কাউন্সিল ঘিরে অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছে আতঙ্কে। সব দলকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে পরিচিত অনেক নেতা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে স্থান পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ম্যানেজ মাস্টারখ্যাত এক নেতা পরবর্তী সময়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার চেষ্টা করছে গুঞ্জন আছে। তবে এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ায় কুখ্যাত অনুপ্রবেশকারীরা রয়েছে আতঙ্কে।

আওয়ামী লীগ টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে অনুপ্রবেশকারীদের জয়জয়কার চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও সরকারের দুই মেয়াদেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে নৌকাবোঝাই হয়েছে ধানের শীষ-লাঙ্গল-দাঁড়িপাল্লায়। তবে এবার দল থেকে আগাছা পরিষ্কারে কঠোর মিশনে নেমেছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী কাউন্সিলে দলের কোনো সংগঠনে যেন অনুপ্রবেশকারীরা ঠাঁই না পায় সেজন্য জেলায় জেলায় তালিকা পাঠানো হয়েছে। যদিও দলের  সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দেড় হাজার অনুপ্রবেশকারী, তবে সূত্র মতে এই সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি।
ইতোমধ্যে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩৮৯ জন অনুপ্রবেশকারীর তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রংপুর জেলায় ২২, দিনাজপুরে ১১৫, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩০, নীলফামারীতে ১৩ এবং লালমনিরহাটে রয়েছে ১০৯ জন। তালিকায় অনুপ্রবেশকারীর নাম, ঠিকানা, বর্তমান পদবি ও আওয়ামী লীগে যোগদান করার আগে কোনো দল বা কী করতেন সেটা উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনুপ্রবেশকারীরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা কমিটির মাধ্যমে দলে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নেয়। কেউ কেউ নৌকার টিকেটে ইউনিয়ন ও উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এমনকি সংসদ সদস্য পর্যন্ত হয়েছে। আবার কেউ রয়েছে সুবিধাবাদী। যখন যে দল ক্ষমতায়, সেই দলেই ঢুকে সুবিধা ভোগ করে এবং অপকর্ম করে দলের অর্জন ম্লান করে।
সম্প্রতি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান গ্রেফতারের পর জানা গেছে এরা দুজনই ফ্রিডম পার্টির সদস্য ছিলেন এবং শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালানোর মামলায় আসামি। টেন্ডার সম্রাট জিকে শামীম এক সময় মির্জা আব্বাসের ডান হাত ছিল, করত যুবদল।
সূত্র মতে, তালিকায় তিন হাজার অনুপ্রবেশকারী ছাড়াও সারা দেশে দুই হাজারেরও বেশি বিতর্কিত নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি, মাদক, জুয়ার ব্যবসা চালিয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে, তাদের জন্য সুনামি বার্তা পাঠিয়েছেন দলীয়প্রধান। নিজস্ব ও বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে এই তালিকা করিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। ফলে অনুপ্রবেশ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। অনেকে চেহারাটা পাল্টে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে বিভিন্ন কাজ করে আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলছে।

অন্যদিকে যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে, তারা অনেক সময় এদের কারণে অবহেলিত, কোণঠাসা। এই বিতর্কিত-অনুপ্রবেশকারীরা যেন কোনোভাবেই আগামী কমিটিতে না আসতে পারে এজন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে।
তালিকায় দেড় হাজারের মতো অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে মন্তব্য করে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে যারা আসে, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ভ‚মিদস্যু, যাদের ইমেজ খারাপ, যাদের রাজনীতি জনগণের কাছে খারাপ, এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীর তালিকা প্রধানমন্ত্রী নিজের তত্ত¡াবধানে তৈরি করেছেন। তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী দলীয় কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই তালিকা বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে সারা দেশে যে সম্মেলন হচ্ছে, অনুপ্রবেশকারী বা বিতর্কিতরা যেন কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে আসতে না পারে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।